আমেরিকায় এখন বাঙালীদের মেলা। নিউইয়র্কে তাে তারা রীতিমত একটি প্রধান বর্ধনশীল জাতিগােষ্ঠী। ‘দূরের আকাশ’ তাদেরই জীবনের খানিকটা। এ জীবন চিরকালের বাঙালীরই, কেবল কখনাে কখনাে প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
বইটির অনেক চরিত্রের সাথেই খুব কাছ থেকে দেখা হয়েছে। তেমনি করে নিজের সাথেও। কোন কোন চরিত্রের ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, তার ভেতরের ছােট্ট এক কোনে আমিই লুকিয়ে আছি। পটভূমি ভিন্ন হলেও এই বইয়ে ঘুরে ফিরে এসেছে বাংলাদেশই। সেই দেশ, সেই মানুষ, সেই প্রকৃতি— যার জন্য প্রবাসীদের মন কাঁদে। অথচ তা এখন দূরের আকাশ। আমাদের দেশটিতে দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণা-ঝামেলা অন্যায়-অবিচার ক্ষুধা-দারিদ্র অভাব-অনটন ব্যর্থতা-হতাশা কিছুই বড় কম নেই। তবুও ভাবে আবেগপ্রবণ এবং স্বভাবে কবি সেই দেশের মানুষ যেখানেই যাক না কেন, দেশের জন্য তাদের প্রাণ ব্যাকুল হয়। ব্যাকুল হয় খালের ধারের মাছরাঙা পাখিটি থেকে শুরু করে ধানের ক্ষেতের বাতাস কিংবা আকাশ জুড়ে মেঘের জন্যও। শত স্বজন, হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার বন্ধু, এমনকি পথের ধারের পাগলটির জন্যও মন কেমন করে। এই জিনিস সব সময় বুঝানাে যায় না। দূর প্রবাসে বসে এক ব্যাকুল আকুলতায় যখন যা ছুঁতে যায়, তা-ই দেখে সহস্র যােজন দূরে। তখন বড় কষ্ট হয়। সেই কষ্ট ফুরােয় না।
দূরের আকাশ
মোশারফ হোসেন