তাওবাদ এমন একটি দর্শন যা পরবর্তী সময়ে লোকধর্মে রূপান্তরিত হয়েছিল। এর মূল গ্রন্থ হলো খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে লাওসি রচিত ‘তাও তে চিং’। তবে চুয়াংসুর রচনাও একে প্রভাবিত করেছিল। তাও-এর অর্থ পথ। এটা এমন একটি আধ্যাত্মিক সত্তা বা শক্তি যা সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে প্রবাহিত, কিন্তু কখনো যা স¤পূর্ণরূপে বর্ণনা বা অনুভব করা যায় না। চীনা দর্শনের সব ধারাই নৈতিক জীবন যাপনের সঠিক পন্থা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। কিন্তু তাওবাদ একে বিমূর্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এতে নিষ্ক্রিয়তা, কোমলতা, স্বতঃস্ফূর্ততা ও আপেক্ষিকতার শক্তির কথা বলা হয়েছে। এই দর্শনকে সক্রিয় নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত কনফুসীয় মতবাদের প্রতিপক্ষ মনে করা হলেও তা নিয়ে দ্বিমত আছে। বরং চীনা পণ্ডিতদের অনেকেই বাইরে কনফুসীয় মতবাদ আর ভেতরে তাওবাদ চর্চার কথা বলেছেন। বিশ্বের মঙ্গলের জন্য গৃহীত মানুষের অনেক প্রয়াসই বাস্তবে অমঙ্গল বয়ে আনে- এই নিদারুণ বাস্তবতার ওপরই তাওবাদ দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। প্রকৃতি ও মানুষের ওপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর হস্তক্ষেপের পরিবর্তে প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ, পরিবর্তন ও বিবর্তন চক্রের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং স্বর্গের অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার ওপরই তাওবাদ সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে।
লাওসি’র তাও তে চিং
হেলাল উদ্দিন আহমেদ
















