বিগত শতাব্দীর ষাটের দশক ছিল বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। মজলুম নেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে উত্তাল বাংলাদেশ। পশ্চিম বাংলায় চলছে নকশাল আন্দোলনের বিপ্লবী জোয়ার। তার ঢেউ এসে পড়ে এপার বাংলায়ও। মার্কস-এঙ্গেলস, লেনিন-স্তালিন, মাও সে-তুঙ আর চেগুয়েভেরার আদর্শে উজ্জীবিত দুনিয়ার তরুণ সমাজ। এই পটভূমিতে এক অনন্য ভূমিকায় বাংলা সাহিত্যে উন্মেষ ঘটে এক নতুন ধারার- সমাজ সচেতন ছড়ার ধারা। ব্যাঙ্গোমা-ব্যাঙ্গোমীর ফ্যান্টাসীর উদ্দেশ্যহীন ননসেন্স রাইমের জগত থেকে ছড়া সাহিত্যকে নিয়ে আসা হয় রাজপথ-জনপদের প্রতিবাদের ভাষারূপে। কিংবা কখনো বা প্রতিবাদী মিছিলের শিল্পিত স্লোগানের শ্লোক হিসেবে।
ছড়াকার ইফতেখার হোসেন সেই সময়ে এই ধারারই এক বিপ্লবী তরুণ ছড়াকার। দেশের নামকরা পত্র-পত্রিকার পাতায় পাতায় মুদ্রিত হতে থাকে লেখকের ছড়া, পদ্য ও কবিতা। কম বয়সীদের মধ্যে তখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছড়াকার তিনি।
হঠাৎই ছড়ার নক্ষত্র খসে পড়লো ঢাকা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে লেখকের সোভিয়েত ইউনিয়নে উচ্চ শিক্ষায় যাত্রার মধ্য দিয়ে। সেখান থেকে সুইডেনে পাড়ি জমানো।
তারপর সারা পৃথিবী। অর্থনীতিতে পিএইচ ডি করলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর অমর্ত্য সেনের তত্ত্বাবধানে। কর্মরত ছিলেন সুইডিশ সিডায়, ব্রিটিশ হাইকমিশনে এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। অবসরে গেলেন জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসেবে।
সেই কিশোর বেলায় শুধু চার বছরে [১৯৬৯-১৯৭২] রচিত ও প্রকাশিত নির্বাচিত ছড়া ও কবিতার সমাহারে এই গ্রন্থ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সেই সময়েরই স্বনামধন্য শিল্পী রফিকুন নবী, যিনি নিজেও একজন ছড়াকার বটেন এবং রনবী নামেই যাঁর দেশব্যাপী পরিচিতি।
গ্রন্থের লেখাগুলো কৈশোরের চোখ দিয়ে রচিত হয়েছে। যা ওই সময়ের প্রতিবাদের রাজনীতি, প্রকৃতির প্রতি অশেষ ভালোবাসা এবং মানব প্রেমের এক অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রাবলী।
ঘড়ায় ভরা পদ্য ছড়া
ইফতেখার হোসেন
















