“ক্যামেরাগিরি” বইয়ে কবি ফরহাদ মজহার তাঁর কাব্যচর্চাকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এখানেই ভাষাভঙ্গি, উপমা, উপস্থাপনায় বাংলা কবিতার আরেকটি নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে।
বাংলা কাব্যের ঐতিহ্য, আধুনিকতা ও দর্শনের যে মিলনভূমি “এবাদতনামা”তে সূচিত হয়েছিল, “ক্যামেরাগিরি” তাতে যুক্ত করেছে ভাষা ও ভাবনার সৃজনশীল ইশারা। এটি ভাব, আকার, রূপ ও অনির্বচনীয়তার এক গভীর প্রকাশ।
ফরহাদ মজহার বাংলা কবিতাকে ঔপনিবেশিক আধুনিকতার মৃত্যুযাত্রা থেকে ফিরিয়ে আপন ঐতিহ্যের নাড়ি-সম্পৃক্ত করার বলিষ্ঠ উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আরো আগেই। যার অভাবনীয় উদ্ধোধন এবাদতনামা। যেখান থেকে বাংলা কবিতার মোড় মৌলিকভাবে ঘুরিয়ে দিয়ে তিনি একে যুক্ত করলেন, বাংলার ভাবসম্পদের অন্তর্গত কাব্য ও দর্শনের যুগল সম্মিলনে। এবার ক্যামেরাগিরির পরীক্ষা-নিরীক্ষায়, আরো ভিন্নতর মাত্রায় বিষয় ও আঙ্গিকের অভিনবত্বের ভিতর প্রসারিত করেছেন। ভাষাভঙ্গি, উপমা ও প্রকরণে যথারীতি এবারো একটি নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করেছেন নিঃসন্দেহে। একইসাথে বাংলা কবিতা: পরমার্থিকতার উদয়ে, প্রজ্ঞার সুনর্মল লাবণ্য ধারণে, অনির্বিচনীয় বাগার্থের উৎপূর্ণতায় অভিষিক্ত একটি মর্মর ধ্যানকল্পের পূর্ণতা পেয়েছে। সহজে অতল গভীরতার দিকে টেনে নেওয়ার প্রাণস্পর্শী কাব্য সুষমার স্বাক্ষর ক্যামেরাগিরি কাব্যভাষায় রূপ ও অরূপের মিলিত মুহূর্তের ধারক হয়ে উঠেছে। এখানে পূর্ণ হয়েছে মৌনতা, দীপ্ত হয়েছে উচ্চারণ। যেখানে বিষয় বা বিষয়ীর ভেদ লুপ্ত; অর্থের লীলা ছলছল শরীর ভেঙে সৃষ্টিশীল দিব্যতার ব্যক্ত প্রভা ইতিহাসের নতুন ইশারা হয়ে হাতছানি দেয়। আসুন সেই আনন্দযাত্রায়, এই উৎসারণের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে।
ক্যামেরাগিরি
ফরহাদ মজহার